সৌদি আরবে যখন নারী অধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-নিপীড়ন চলছে, তখন এক সৌদি রাজকুমারীকে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নারী আন্দোলনের অগ্রপথিক হিসেবে উপস্থাপন করায় এর তীব্র সমালোচনা চলছিল।
কিন্তু ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, রাজকুমারী হায়ফাকে প্রচ্ছদে এনে তারা সঠিক সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আরব দুনিয়ায় নারীর জীবন নিয়ে এখন যেসব ইস্যুতে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে, তারা সেটাকেই এর মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
‘ভোগ আরাবিয়া’র প্রচ্ছদে রাজকুমারী হায়ফা বিনতে আবদুল্লাহ আল সউদের যে ছবিটি ছাপা হয়, তাতে দেখা যায় তিনি খুবই হালফ্যাশনের পোশাক এবং বুট পরে একটি দামি গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছেন।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবে এমাসেরই ২৪ তারিখ থেকে মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার কথা।
কিন্তু যে নারী অধিকার কর্মীরা সেদেশে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অধিকার অর্জনের আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেককেই সম্প্রতি সৌদি কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করে।
এদের অনেকে এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ এই পুরো বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছেন সৌদি রাজকুমারীকে গৌরবময় ভূমিকায় উপস্থাপন করে।
‘ভোগ আরাবিয়া’র প্রধান সম্পাদক ম্যানুয়েল আরনট অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি দাবি করছেন, আরব দুনিয়ায় এখন নারীদের যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলছে, এর মাধ্যমে তারা সেটাকেই গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তার মতে, রাজকুমারী হায়ফাকে প্রচ্ছদে আনার মাধ্যমে তারা বরং সেই বার্তাটিকে আরও বহুগুণ বেশি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
বিবিসির কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, “তাৎপর্যপূণ বিষয়ে গঠনমূলক বিতর্ককে আমরা অগ্রাধিকার দেই। এই শক্তিশালী এবং প্রতীকি ছবিটি প্রচ্ছদে প্রকাশ করার মাধ্যমে আমরা সেই কাজটাই করেছি। সৌদি সমাজে নারীর ভূমিকার প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।”
কিন্তু সৌদি আরবে অনেক টুইটারে এই বলে অভিযোগ করেছেন যে সৌদি রাজকুমারী ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে আসার যোগ্য নন। বিশেষ করে তাকে তো ‘ড্রাইভিং ফোর্স’ বলে বর্ণনা করার প্রশ্নই উঠে না।
তবে অন্য অনেকে ভোগ ম্যাগাজিনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তারা মনে করেন সৌদি রাজকুমারীকে প্রচ্ছদে এনে নতুন ইতিহাস তৈরি করা হয়েছে।
বিবিসির আরব অ্যাফেয়ার্স সম্পাদক সেবাস্টিয়ান আশার বলেছেন, এই বিতর্ক ২০১১ সালের একটি ঘটনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেবছরও ভোগ ম্যাগাজিন একই ধরনের সমালোচনার মুখে পড়েছিল যখন তারা সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি আসমা আসাদকে নিয়ে তাদের গ্লোবাল এডিশনে একটি ফিচার প্রকাশ করে। প্রেসিডেন্ট আসাদ তখন মাত্র বিক্ষোভকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে শুরু করেছিলেন। আর ঐ একই সময়ে ভোগ ম্যাগাজিনে আসমা আসাদকে নিয়ে এই ফিচার ছাপা হয়।
সৌদি বাদশাহ সালমান গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দেন যে তিনি মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন। এ নিয়ে সেখানে বহু বছর ধরে আন্দোলন চলছিল।
ভোগ ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাজকুমারী হায়ফা বলেছেন, তিনি বাদশাহর এই সিদ্ধান্তকে সোৎসাহে সমর্থন করেন।
ভোগ ম্যাগাজিনের এই সংখ্যাটিতে আরও কয়েকজন নামকরা সৌদি নারীর সাক্ষাৎকার রয়েছে। এদের মধ্যে আছেন ফ্যাশন ডিজাইনার, ফুটবলার এবং এবং আলোকচিত্রী।
সূত্র, বিবিসি